শুক্রবার হল মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিনের মত। এই বিশেষ দিনে মুসলমানগণ জুম্মার নামাযে শরিক হন। এই জুম্মার দিনে যোহরের নামাযের পরিবর্তে ২ রাকআত জুম্মার নামায ফরজ করা হয়েছে। তাই শুক্রবারকে জুম্মবারও বলা হয়ে থাকে। তবে অনেক মুসলমানই আছেন যারা এই জুম্মার নামাযের নিয়ম ও নিয়ত জানেন না। আজকের এই আর্টিকেলে তাদের জন্য বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
জুম্মার নামাযের রাকআতের সংখ্যাঃ
- কাবলাল জুম্মা চার রাকআত (সুন্নতে মুয়াক্কাদা)
- দুই রাকআত ফরজ
- বাদাল জুম্মা চার রাকআত (সুন্নতে মুয়াক্কাদা)
সুন্নতে মুয়াক্কাদা কি ?
উত্তরঃ সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলতে সেই সুন্নতকে বুঝায় শরীয়তে যার গুরুত্ব ওয়াজিবের সমতুল্য! হানাফি মাজহাবে এই সুন্নতের উপর বেশ জোর দেওয়া হয়েছে। তাই সকলের উচিত সুন্নতে মুয়াক্কাদা গুলো গুরুত্বের সাথে আদায় করা! জুম্মার নামাযে অনেককে দেখা যায় বাদাল জুম্মার চার রাকআত নামায না আদায় করে বাড়ি চলে আসে যা করা মোটেও ঠিক না! এই চার রাকআত বাদাল জুম্মা খুবই গুরুত্বপূর্ণ! পরবর্তী পোস্টে সুন্নতে মুয়াক্কাদা সম্পর্কে লিখা হবে! আজকে জুম্মার নামাযের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে জেনে নেই।
জুম্মার নামাযের নিয়ত সমুহঃ
কাবলাল জুম্মার নিয়তঃ
আরবি নিয়ত বাংলায় উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকাআতি ছালাতি কাব্লাল জুমুয়াতি, সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তয়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ ক্বাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আক্বার।
বাংলা নিয়তঃ আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহ্র ওয়াস্তে সুন্নতে মুয়াক্কাদা চার রাকায়াত কাবলাল জুম্মার নামাযের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।
জুম্মার ফরজ নামাযের নিয়তঃ
আরবি নিয়ত বাংলায় উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন্ উসকিতা আন্ জিম্মাতী ফারদুজ্জহ্রি, বি-আদায়ি রাকয়াতাই ছালাতিল্ জুমুয়াতি, ফারজুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ ক্বাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আক্বার।
বাংলা নিয়তঃ আমার উপর যোহরের ফরজ নামাজ আদায়ের যে দায়িত্ব রয়েছে, আমি কিবলামুখী হয়ে, জুম্মার দুই রাকআত ফরজ নামায আদায়ের মাধ্যমে তা পালনের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।
বাদাল জুম্মার নিয়তঃ
আরবি নিয়ত বাংলায় উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকাআতি ছালাতি বাদাল জুমুয়াতি, সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তয়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ ক্বাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আক্বার।
বাংলা নিয়তঃ আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহ্র ওয়াস্তে সুন্নতে মুয়াক্কাদা চার রাকায়াত বাদাল জুম্মার নামাযের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।
জুম্মার দিন এবং নামাযের অন্যান্য নিয়ম সমূহঃ
জুম্মার দিন মুমিনদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিনের মত, তাই যতটুকু সম্ভব নতুন জামা বা পরিস্কার জামা পড়া উত্তম। তারপর আসে পরিস্কার পরিচ্ছনতার দিকে। জুম্মার দিনে চুল, নক ইত্যাদি কাটা এবং পরিস্কার করা। তারপর ভালোভাবে গোসল করে নামায পড়তে যাওয়া। আযানের পর সবার আগে মসজিদে যাওয়ার চেষ্টা করা। এতে অনেক বেশি সওয়ার পাওয়া যায়। আযানের পর নির্দিষ্ট সময়ে কাবলার জুম্মার চার রাকআত সুন্নত নামায আদায় করে নেওয়া।
খুতবাঃ জুম্মার দিনে খুতবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় যা জুম্মার নামাযের মতই গুরুত্বপূর্ণ! খুতবার মাধ্যমে ইমাম সাহেব কোরআন ও হাদিসের আলোকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন! এই খুতবার সময় আমরা যেই ভুলটা সাধারণত করে থাকি তা হল কথা বলা! খুতবা শুনা ওয়াজিব আর খুতবার সময় কথা বলা সম্পূর্ণ রুপে নিষেধ! কেউ যদি এই খুতবার সময় কথা বলেন তাহলে গুনাহগার হবেন। যিনি এই খুতবা দিয়ে থাকেন তাকে বলা হয় খতিব! এই খতিবের দায়িত্ব মসজিদের প্রতিদিনের ইমামও পালন করতে পারেন আবার বিশেষ কেউও পালন করতে পারেন! এই খুতবা মাঝে দুটি অংশ থাকে। প্রথম খুতবার পর অল্প সময়ের একটা বিরতি নেওয়া হয়! খুতবা সাধারণত আরবি ভাষায় দেওয়া হয়ে থাকে! তবে বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় ভাষাতেও দেওয়ার প্রথা বিদ্যমান রয়েছে।
খুতবার পর পরই ইমামের সাথে সাথে জুম্মার ফরজ নামায আদায় করতে হয়। ফরম নামায শেষ হলে বাদাল জুম্মার চার রাকআত সুন্নত নামায পড়তে হয়। এই ছিল জুম্মার নামাযের নিয়ত ও নিয়ম। এছাড়াও যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করুন আমাদের পোস্টে। নামাযের আরও নিয়ম কানুন জানতে ভিজিট করুন আমাদের নামায ক্যাটেগরি।
One comment
Pingback: রোজা রেখে ইনহেলার ব্যবহার করার নিয়ম, রোজা ভাঙবেনা | ইলমুদ্দিন